![]() |
[লেগুনার শিশুহেল্পার] |
উত্তরার হাউজবিল্ডিং থেকে খালপাড় ও ডিয়াবাড়ী রোডের লেগুনাগুলোতে হেল্পার হিসেবে কর্মরত ছোট্ট শিশুদের জীবনগুলো বারবার বিস্মিত করেছে আমায়। এক বৃষ্টিস্নাত বিকেলে- শিল্পকলার ক্লাস শেষে বাসায় ফিরছি। হাউজবিল্ডিং-এ বাস থেকে নেমে লেগুনাস্ট্যান্ডে গেলাম। তখনও ঝিমঝিম বৃষ্টি পড়ছে। আসেপাশে তেমন লোকজন নেই। খুব পিচ্চি একটা শিশু (খুব বেশি হলে ক্লাস থ্রিতে পড়তো!)
হালকাপাতলা শরীরের গঠন। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। শ্যামবর্ণের গোলগাল চেহারা। খয়েরী রঙের একটা হাফহাতা গেঞ্জি যার ডানপাশে খানিকটা ছেঁড়া। টাখনু পর্যন্ত লম্বা একটা কালো ফুলপ্যান্ট; কোমরে বেল্ট না থাকায়- বারবার খসেপড়তে চাচ্ছে। ক্ষয়ে যাওয়া একজোড়া ঢালাই স্যান্ডেল পরিহিত। ঝিমঝিম বৃষ্টিতে ভিজে, হাত উঁচিয়ে, চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে- খালপাড়! ডিয়াবাড়ী! খালপাড়! খালপাড়! বলে বলে যাত্রী ডাকছেন। আমি কাছে আসতেই- এই মামা! এইডাতে ওডেন। এইডা আগে যাইবো। ওডেন, ওডেন। সিড খালি আছে!
আমি উঠে পড়লাম। ১০ জন পূর্ণ হতে আরও দু'জন যাত্রী লাগবে। আমার সামনে তিনজন মহিলা বসেছেন। দুজন ভদ্রলোক ও আমার মতো আরও দুজন ছাত্র। ভদ্রলোক দুজন ফেবুর নিউজফিডে ঘুরছেন। ভদ্রমহিলারা এদিক-সেদিক তাকাচ্ছেন আর ছাত্র দুজন পরষ্পরে খোশগল্পে মগ্ন। ইতিমধ্যেই গা ঘেঁষে দুজন ভদ্রলোক চেপে বসলো। ভদ্রলোক দুজন ওঠামাত্রই- শিশুহেল্পার লেগুনার বডিতে সজোড়ে একটা চপেটাঘাত করলো। সাথে সাথেই লেগুনা স্ট্যাট হলো। লেগুনা ছেড়ে দিতেই- শিশুহেল্পার লাফিয়ে লেগুনার হ্যাঙ্কারে উঠে এলো। বিস্ময়ভরা চোখে ওর দিকে তাকালাম- বাতাসে ওর উষ্কখুষ্ক চুলগুলো উড়ছে। বৃষ্টির ফোঁটায় ওর চোখমুখ ধুয়ে যাচ্ছে। ছেঁড়া গেঞ্জিটাও ভিজে- শরীরের সাথে লেপ্টে যাচ্ছে। ওর কপালটা ভাঁজ হয়ে আসছে। ৬০ কিমি ঘন্টায় আমাদের লেগুনা ছুটছে। শক্তমুঠিতে লেগুনার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে আছে সে। মাঝেমাঝে তীব্র ঝাকিতেও ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। ওর চোখে চোখ পড়তেই কপাল কুঁচকে বললো, ওই মামা! ভারাগুলো দেন তো!
সাথে সাথেই ছুটে গেলাম আমার দূরন্ত শৈশবে।
উল্টাতে লাগলাম একেরপর এক স্মৃতির পাতাগুলো। ইশ! এই বয়সে আমাদের শৈশবগুলো কতোই না মধুময় ও উপভোগ্য ছিলো আর আজ এই বয়সে সে শিখে গেছে জীবন সংগ্রামের চরমশিক্ষা!
ষোল/চার/বাইশ
No comments:
Post a Comment