Monday, March 3, 2025

Situation is changeable

 


পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল: ধৈর্য্য ধরুন

জীবনে পরিস্থিতি কখনো স্থির থাকে না। সময়ের সাথে সাথে, আমাদের চারপাশের ঘটনা, সম্পর্ক, আর্থিক অবস্থা, স্বাস্থ্য—সবকিছুই পরিবর্তিত হয়। আমাদের জীবনের এই পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলতে হলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুণ হলো ধৈর্য। ধৈর্য ধরলে, আমরা যে কোন সংকট মোকাবেলা করতে পারি, এবং জীবনকে আরও ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারি।


ধৈর্য্য এক ধরনের মানসিক শক্তি, যা আমাদের বিপর্যয়, দুঃখ, হতাশা বা অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মধ্যে শান্ত থাকতে সাহায্য করে। এটি শুধু কষ্টের সময়ে কাজে আসে না, বরং জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তে বা পরিবর্তনে তার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়।


ধৈর্য্যের গুরুত্ব:

ধৈর্য্য আমাদেরকে সহনশীল করে, আমাদের মনকে শান্ত রাখে এবং আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা রাখে। জীবনযাত্রায় নানান বাধা-বিপত্তি আসতে পারে। তবে, এই বাধাগুলো পার করতে ধৈর্য্য খুবই জরুরি। ধৈর্য্যহীন হলে, আমরা সহজেই হতাশ হয়ে পড়ি এবং পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার পথ হারিয়ে ফেলি।


উদাহরণ হিসেবে কিছুটা ভাবি:

ধরি, একজন কৃষক নিজের জমিতে কাজ করে, কিন্তু বছরটি ছিল খারাপ আবহাওয়ার। খুব কম ফসল হয়েছে। প্রথমদিকে, কৃষক হতাশ হয়ে পড়েছিল। সে ভাবতে শুরু করেছিল, "এত কষ্টের পরও ফল পেতে পারলাম না।" কিন্তু তার ধৈর্য্য ছিল। সে জানত যে, কিছু কিছু সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি পরিবর্তন হবে। পরবর্তী বছর সে আরও কঠোর পরিশ্রম করল, এবং এ বছর তার ফসল অনেক ভালো হয়েছে। কৃষক জানতেন, কিছু পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ধৈর্য্য ধরে থাকার মাধ্যমে সে তার সমস্যার সমাধান করেছে।


পরিস্থিতি পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে চলা:

ধৈর্য্য আমাদের পরিস্থিতি পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে চলতে শেখায়। জীবনের অনেক পরিবর্তনই অনির্দেশ্য, এবং এই পরিবর্তনগুলো মোকাবেলা করার জন্য ধৈর্য্য আমাদেরকে শক্তি দেয়। কখনো কখনো মানুষের জীবন খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়—এমন পরিস্থিতিতে, যখন কিছুই ভালো না মনে হয়, তখন ধৈর্য্য সাহায্য করতে পারে।


একটি উদাহরণ হিসেবে ধরুন, কোনো ব্যক্তি যদি চাকরির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে এবং একাধিক সাক্ষাৎকারে ব্যর্থ হয়, সে যদি হতাশ হয়ে পড়ে, তবে তার আত্মবিশ্বাস ক্ষয় পাবে। কিন্তু যদি সে ধৈর্য্য ধরতে পারে এবং অবিরত চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে, তাহলে একসময় সে সফল হবে।


এছাড়া, একজন শিক্ষার্থী যখন কঠিন পরীক্ষা বা পড়াশোনার সামনে পড়ে, তখন সে যদি দ্রুত ফলাফল আশা করে, তবে সে মানসিকভাবে চাপের মধ্যে পড়ে যাবে। কিন্তু ধৈর্য্য ধরে, কঠোর পরিশ্রম এবং সময় দিলে, সে তার লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হবে।


ধৈর্য্য এবং বিশ্বাসের সম্পর্ক:

ধৈর্য্য শুধু সমস্যা সামলানোর মাধ্যম নয়, এটি আমাদের বিশ্বাসের শক্তিও বৃদ্ধি করে। জীবনে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সময়, আমরা যদি বিশ্বাস রাখি যে পরিস্থিতি পরিবর্তিত হবে, তাহলে ধৈর্য্য আমাদের আরও দৃঢ় করবে। বিশ্বাস যে কোনো দুর্দিনেও শেষ হয় না, তা আমাদের সংকট মোকাবেলার শক্তি বাড়ায়।


উপসংহার:

এখন, যেকোনো পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির মধ্যে ধৈর্য্য ধরাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো, পরিস্থিতি খুব কঠিন এবং অপ্রত্যাশিত হতে পারে, তবে তা স্থায়ী নয়। জীবনে যদি আমরা ধৈর্য্য ধরতে শিখি, তবে কোনো বাধা বা বিপর্যয় আমাদের অগ্রগতিকে থামাতে পারবে না। আমাদের লক্ষ্য, আমাদের পরিশ্রম, এবং সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের ধৈর্য্যের মাধ্যমে আমরা সমস্ত পরিস্থিতি জয় করতে পারব। তাই, যে কোনো পরিস্থিতিতে, ধৈর্য্য ধরে চলুন—কারণ পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল, আর পরিবর্তনটাই জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কাস্তে ও কুড়ালের সংগ্রাম

 

কৃষকের কাস্তে আর শ্রমিকের কুড়াল: অধিকারহীন সংগ্রামের এক অব্যক্ত গল্প


যখন পৃথিবীর উন্নতি আর সমৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করা হয়, তখন কৃষক ও শ্রমিকদের কথা প্রায়ই অবহেলিত হয়ে যায়। তাদের চোখে কী আসে, যখন সূর্য ওঠে এবং তাদের প্রতিদিনের সংগ্রাম শুরু হয়? তাদের জীবন এক অদৃশ্য লড়াইয়ের প্রতীক, যেখানে স্বপ্ন আর বাস্তবতার ব্যবধান এতটাই গভীর, যে তাদের অধিকার নিয়ে কিছু বলাও যেন নিষিদ্ধ। কিন্তু কৃষক ও শ্রমিকদের শ্রম ছাড়া এই পৃথিবী চলতে পারে না। তাদের পরিশ্রমের ফল কখনো তাদের নিজেদের হাতে পৌঁছায় না, বরং তাদের অধিকারের অমান্যনাই হয়ে দাঁড়ায় তাদের জীবনের গল্প।


কৃষকের কাস্তে: একটি সংগ্রামের চিহ্ন

কৃষকের কাস্তে হাতে, প্রতিদিন সকালে যে কৃষক মাঠে নামেন, তার জীবনটা শুধু কঠোর পরিশ্রম আর তীব্র কষ্টে ভরা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অনির্দিষ্ট আবহাওয়া, ন্যায্য মূল্যের অভাব—এই সব কিছু তার জীবনকে প্রতিনিয়ত চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করায়। সে তার জমির প্রতি যত্নশীল হলেও, তার পরিশ্রমের মূল্য তার কাছে পৌঁছায় না। কৃষক কখনো তার ফসলের সঠিক মূল্য পায় না, বরং ব্যবসায়ী, মধ্যস্বত্বভোগী আর বাজারের অস্থিরতা তাকে প্রতিনিয়ত ঠকিয়ে চলে।


একটি ভালো ফসলের জন্য যে জমিতে খাটছে, সেই জমি তার নিজেরও নয় সবসময়। অনেক কৃষক জমি ভাড়া নিয়ে কাজ করে, আর অধিকাংশ সময় সেই জমির মালিকরা তাদের কাছ থেকে যথাযথ ভাড়া নেয়, কিন্তু কৃষক কিভাবে তার শ্রমের মূল্য পাবে? সে সব সময় ঋণের বোঝা নিয়ে বাঁচে, আর অল্প কিছু লাভের মধ্যে তার জীবন চলে। অথচ কৃষক যদি কোনো কারণে তার ফসলের সঠিক মূল্য পেতো, তবে তার জীবনে স্বস্তি ফিরত। কিন্তু সত্যি বলতে, এটি এখনও এক দূর স্বপ্ন। কৃষকের সংগ্রাম এক বিচ্ছিন্ন যন্ত্রণা, যা কখনো শেষ হয় না।


শ্রমিকের কুড়াল: অবহেলিত পরিশ্রমের ছবি

শ্রমিকরা, যারা প্রতিদিন তার মেহনত দিয়ে শহরের, গ্রামের, শিল্প-কারখানার চাকা চালিয়ে নিয়ে চলে, তাদের জীবনও কোনা কম কঠিন নয়। শ্রমিকের কুড়াল হাতে প্রতিদিনের পরিশ্রমে তার শরীরটা নিংড়ে চলে, কিন্তু এর পুরস্কার কোনোদিন তাকে হাতে পৌঁছায় না। প্রাথমিকভাবে তাকে একটুকু টাকা পয়সা দেওয়া হয়, তবে তার পরিশ্রমের বাস্তব মূল্য কি তাকে কখনো দেওয়া হয়? কখনো নয়। শ্রমিকেরা দীর্ঘ ঘণ্টা কাজ করলেও, অনেক ক্ষেত্রেই তাদের পারিশ্রমিক অত্যন্ত কম। তাদের অধিকার আদায় করতে গিয়ে তারা যে লড়াই চালায়, তা অনেক সময়ই তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়—হয় তাদের ঐক্য ভেঙে দেয়া হয়, অথবা তাদের ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে রাখা হয়।


এদিকে, শ্রমিকদের নিরাপত্তা আর সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা প্রায় অনুপস্থিত। দুর্ঘটনায় আহত হওয়া, অসুস্থ হয়ে পড়া—এমন পরিস্থিতিতে তারা আশ্রয় নাও পায়। তাদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ, তবে প্রায়শই তাদের শ্রমের মূল্য তাদের হাতে আসেনা। তারা কী আর তাদের শ্রমের পুরস্কার পেতে পারে, যখন যে প্রতিষ্ঠান বা কর্মক্ষেত্রে তারা কাজ করছে, সেই প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সামাজিক ও আর্থিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখে?


অধিকারহীন সংগ্রাম

কৃষক ও শ্রমিকদের সংগ্রাম সত্যিই এক অব্যক্ত যন্ত্রণা। তাদের জীবন শুধু কষ্টে ভরা নয়, বরং প্রতিনিয়ত তারা শোষিত হচ্ছেন, তাদের অধিকার আদায়ের জন্য তাদের লড়াইও থামছে না। তারা শুধু কাজ করে যাচ্ছে, তবে তাদের সেই শ্রমের সঠিক মূল্য কোথাও মেলে না। কৃষক কি তার ফসলের যথাযথ মূল্য পায়? শ্রমিক কি তার কাজের মান অনুযায়ী যথার্থ পারিশ্রমিক পায়? অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও, উত্তরটা হচ্ছে "না"।


এই দুটি শ্রেণী সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। কৃষকরা আমাদের খাদ্য সরবরাহ করে, আর শ্রমিকরা আমাদের কারখানা, শহর, দোকান—সবখানেই পরিশ্রম করে সমাজকে সচল রাখে। তাদের অবহেলা, তাদের অধিকারবঞ্চিত জীবন সমাজের সবচেয়ে বড় অবিচার। তাদের শ্রম ছাড়া আমাদের সমাজ অচল হয়ে পড়বে, অথচ তাদের অবদান কখনোই পূর্ণ মূল্যায়ন পায় না। সমাজের উন্নতির এই পথে তাদের অংশীদারিত্ব থাকা উচিত, তবে বর্তমানে তারা তার অধিকার থেকে বঞ্চিত।


এটা কি সঠিক?

জীবনের এই কঠিন সংগ্রামে তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। তাদের শ্রমের মূল্য দেওয়া, তাদের অধিকার সুরক্ষিত করা—এটাই আমাদের কর্তব্য। তারা যে কাজ করছেন, তার সম্মান জানানো আমাদেরও এক ধরনের দায়বদ্ধতা। তাদের জীবনকে একটু সহজতর করতে, তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।


তাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে, তবে যদি আমরা এই সংগ্রামকে শুধু একটি সামাজিক দায়িত্ব হিসেবে দেখি, তাহলেই আমাদের সমাজে কিছুটা পরিবর্তন সম্ভব। কৃষকের কাস্তে আর শ্রমিকের কুড়াল, এই দুইটি সরঞ্জাম হয়ে ওঠে তাদের অভ্যন্তরীণ সংগ্রামের প্রতীক, যাদের লড়াই কখনো থামবে না, যতদিন না তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

উন্নতিতে হিংসা নয়: শুভকামনা করুন


 উন্নতিতে হিংসা নয়: শুভকামনা করুন

মানুষের স্বভাবজাত অনুভূতিগুলোর মধ্যে হিংসা অন্যতম। কারও সাফল্য বা উন্নতি দেখে অনেকেই মনের মধ্যে এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতার আগুন জ্বালিয়ে ফেলে। মনে হয়, "ও কেন এগিয়ে গেল, আর আমি কেন পারলাম না?" অথচ, এই হিংসার কোনো ইতিবাচক দিক নেই। এটি শুধু মানসিক অশান্তি বাড়ায়, সম্পর্ককে নষ্ট করে এবং আত্মউন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে।


অন্যের সাফল্যে হিংসা করার পরিবর্তে যদি আমরা তার জন্য সত্যিকারের শুভকামনা জানাই, তাহলে দেখব, আমাদের জীবনও ইতিবাচকতা দিয়ে ভরে উঠছে। আসলে, অন্যের জন্য ভালো চাওয়ার মধ্যেই নিজের শান্তি লুকিয়ে থাকে।


হিংসার ক্ষতিকর প্রভাব

হিংসা আমাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার উপরও প্রভাব ফেলে। এটি আমাদের মনে চাপ সৃষ্টি করে, রাগ ও হতাশা বাড়িয়ে দেয়। অনেক সময় আমরা ভাবি, "আমি তো এত পরিশ্রম করলাম, কিন্তু তার ভাগ্য এত ভালো কেন?"—এই ধরনের নেতিবাচক চিন্তা আমাদের আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয় এবং আমাদের লক্ষ্য থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।


হিংসা আত্মিক অশান্তি সৃষ্টি করে—অন্যের ভালো দেখে যখন আমরা মন খারাপ করি, তখন আমাদের নিজেদের সুখও কমে যায়।

এটি আমাদের উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করে—আমরা যদি অন্যের উন্নতিকে মেনে নিতে না পারি, তাহলে নিজের উন্নতির জন্যও কাজ করতে পারব না।

সম্পর্ক নষ্ট হয়—হিংসাপরায়ণ মনোভাব মানুষকে একা করে দেয়, কারণ কেউই নেতিবাচক মানসিকতার মানুষের সঙ্গে থাকতে চায় না।


একটি বাস্তব সত্য হলো, যিনি হিংসা করেন, তিনি নিজেই তার মানসিক শান্তি নষ্ট করেন। আর যিনি শুভকামনা করেন, তিনি নিজের মনকেও শান্ত রাখেন।


শুভকামনা করুন: এতে কী লাভ?

অনেকে ভাবেন, অন্যের জন্য শুভকামনা করলে যেন কিছু হারিয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে এটি আমাদের জীবনকে আরও সুন্দর করে তোলে। যখন আমরা কারও সাফল্যে সত্যিকারের আনন্দ অনুভব করি, তখন আমাদের হৃদয়ে প্রশান্তি আসে, সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়, এবং আমরা নিজেও ভালো কিছু অর্জন করতে উদ্বুদ্ধ হই।


শুভকামনা ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি করে—অন্যের জন্য ভালো চাইলে নিজের মনেও ইতিবাচক শক্তি জন্ম নেয়।

এটি আত্মবিশ্বাস বাড়ায়—আমরা যখন বুঝতে পারি যে, অন্যের সাফল্য আমাদের ক্ষতি করছে না, তখন আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজেকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে পারি।

শুভকামনা সম্পর্ক দৃঢ় করে—যে মানুষ সবসময় অন্যের জন্য ভালো চায়, তাকে সবাই ভালোবাসে ও সম্মান করে।


একজন জ্ঞানী বলেছেন—

"তুমি যদি অন্যের ভালো চাও, তাহলে সেই ভালো তোমার জীবনেও ফিরে আসবে।"


হিংসার পরিবর্তে কীভাবে শুভকামনা করবেন?

নিজেকে বোঝান যে, সবার সময় আলাদা—কারও উন্নতি মানেই আপনি পিছিয়ে যাচ্ছেন না। আপনার সময়ও আসবে, শুধু লেগে থাকতে হবে।


অন্যের সাফল্য থেকে শেখার চেষ্টা করুন—যে সফল হয়েছে, সে নিশ্চয়ই কিছু না কিছু ভালো কাজ করেছে। হিংসা না করে, তার থেকে শেখার চেষ্টা করুন।


নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন—অন্যের জীবন দেখে হিংসা না করে, নিজের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করুন। প্রতিযোগিতা অন্যের সঙ্গে নয়, বরং নিজের আগের অবস্থানের সঙ্গে হওয়া উচিত।


সচেতন প্রশংসা করুন—যখন কেউ ভালো কিছু অর্জন করে, তখন খোলা মনে তার প্রশংসা করুন। এতে আপনার মনেও ইতিবাচক শক্তি আসবে।


মানসিক প্রশান্তির জন্য প্রার্থনা করুন—যে নিজের মনের শান্তি চায়, সে কখনো অন্যের প্রতি হিংসা পোষণ করতে পারে না। নিজেকে অভ্যস্ত করুন প্রার্থনার মাধ্যমে ইতিবাচক চিন্তা করতে।


উপসংহার

জীবনে সত্যিকারের সুখী হতে চাইলে, অন্যের সাফল্যে হিংসা করা বন্ধ করতে হবে। বরং সবার জন্য শুভকামনা করতে শিখতে হবে। এতে আমাদের আত্মিক শান্তি বাড়বে, সম্পর্ক আরও মধুর হবে এবং আমাদের নিজের পথ আরও প্রশস্ত হবে।

অবহেলা নয়, গুরুত্ব দিতে শিখুন


অবহেলা আর গুরুত্ব দেয়ার মানসিকতা: একজন মানুষের জীবন ও সম্পর্কের দিকনির্দেশক


মানুষের জীবনে, অবহেলা এবং গুরুত্ব দেয়ার মধ্যকার সম্পর্কটি অনেক গভীর এবং সুক্ষ্ম। একে অন্যকে সঠিকভাবে বুঝে চললে সম্পর্কের মাধুর্য এবং আত্মিক শান্তি বৃদ্ধি পায়, অন্যথায়, অবহেলার তীব্রতা এবং গুরুত্ব না দেয়ার অনুভূতি মানুষের মধ্যে এক গভীর বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করতে পারে।


অবহেলা: নীরব হত্যাকারী

অবহেলা কেবল শারীরিকভাবে নয়, বরং মানসিকভাবে বেশি ক্ষতি করতে পারে। অনেক সময় মানুষ নিজের অজান্তেই কিংবা অনিচ্ছায় অন্যদের অবহেলা করে ফেলে। এটি এক ধরনের মানসিক নির্যাতন যা মানুষের আত্মবিশ্বাসে ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। অবহেলার কারণে সম্পর্কের মধ্যে তৈরি হয় এক অস্পষ্ট দূরত্ব, যা কোনভাবেই সম্পর্কের স্বাস্থ্যে ভালো ফল বয়ে আনে না। এর ফলস্বরূপ, যে মানুষটি অবহেলিত অনুভব করে, সে তার অস্তিত্ব বা প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে যায়।


এছাড়াও, অবহেলা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যারা অবহেলিত হন, তারা নিজেদের অক্ষম, অপ্রয়োজনীয় বা অবমূল্যায়িত মনে করতে শুরু করেন। দীর্ঘমেয়াদী অবহেলা আত্মবিশ্বাস এবং আবেগগত স্বাস্থ্যের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে, যা পরবর্তীতে বিষণ্নতা, উদ্বেগ এবং একাকীত্বের দিকে নিয়ে যেতে পারে।


গুরুত্ব দেয়া: সম্পর্কের উন্নতির চাবিকাঠি

অন্যদিকে, মানুষের প্রতি গুরুত্ব দেয়া সম্পর্কের মধ্যে গড়ে তোলে এক প্রকার নিরাপত্তা এবং শ্রদ্ধার পরিবেশ। যখন আমরা কাউকে গুরুত্ব দিই, তখন আমরা তাদের অস্তিত্ব এবং তাদের অনুভূতিকে সমাদর করি। এটা কেবল আরেকজনের মনে প্রশান্তি ও তৃপ্তি সৃষ্টি করে না, বরং সম্পর্কের ভিত্তিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।


গুরুত্ব দেয়ার মাধ্যমে, আমরা অন্যকে তাদের পরিপূর্ণতা উপলব্ধি করতে সাহায্য করি এবং তাদের আস্থা বাড়িয়ে তুলি। কাউকে তার অনুভূতি, চিন্তা ও সিদ্ধান্তের জন্য গুরুত্ব দিলে, তার মধ্যে দায়িত্ববোধ এবং আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়, যা তার জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে। এটি শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, পেশাগত জীবনেও প্রযোজ্য। একজন কর্মচারী যখন তার কর্তৃপক্ষের কাছে গুরুত্ব পায়, তখন সে তার কাজের প্রতি আরও নিষ্ঠাবান হয়ে ওঠে এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি তার আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।


অবহেলা এবং গুরুত্ব দেয়ার মধ্যে সমন্বয়

অবহেলা এবং গুরুত্ব দেয়ার মধ্যে ভারসাম্য রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কখনো কখনো, কিছু পরিস্থিতিতে আমরা অন্যদের প্রতি একটু বেশি গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করি, যা তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। আবার, কখনো আমাদের উচিত কিছুটা অবহেলাও প্রদর্শন করা, যেন অন্যরা নিজেদের স্বাবলম্বী হতে পারে। তবে, এটা মনে রাখতে হবে যে, এই ভারসাম্যটা সঠিকভাবে বুঝে চলতে হবে, কারণ সম্পর্কের মধ্যে এক পেশিশক্তি থাকা ভালো, তবে তা অত্যধিক হলে তা নিয়ন্ত্রণ হারাতে পারে।


উপসংহার: মনের গভীরতা থেকে সম্পর্কের গড়ন

অবহেলা এবং গুরুত্ব দেয়ার মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য রয়েছে, এবং তা সম্পর্কে সচেতন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। মানুষের মানসিক ও আবেগিক প্রয়োজনগুলি বুঝে, তাদের প্রতি সতর্কতা ও সহানুভূতির সঙ্গে আচরণ করা প্রয়োজন। একে অপরকে গুরুত্ব দেয়া শুধুমাত্র ভালো সম্পর্ক তৈরি করে না, বরং একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস এবং সুখী জীবনযাপনে এক অমূল্য ভূমিকা পালন করে।


অবহেলা থেকে সাবধান থাকতে হবে, কারণ এটি সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে। অপরদিকে, অন্যদের প্রতি সঠিক গুরুত্ব দেয়া তাদের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে, যা পৃথিবীটাকেই আরও সুন্দর করে তোলে।


এই কারণে, সম্পর্কের প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের উচিত পরস্পরের অনুভূতির প্রতি সচেতন থাকা, যাতে আমরা কেবল ভালোবাসা এবং সহানুভূতির মাধ্যমে একে অপরকে আরও সমর্থন এবং সান্ত্বনা দিতে পারি।

Tuesday, July 30, 2024

শৈশব-কৈশোর

 

শৈশব আর কৈশোরের গণ্ডি পেরিয়ে বয়স যখন ২২ কিবা ২৩ ছুঁই ছুঁই। যুবক ও যুবতীরা বিপরীত লিংঙ্গের প্রতি স্বাভাবিক নিয়মে ঝুঁকে পড়ে। স্বভাবতই দুর্বল হয়ে যায় প্রতিটি বিপরীত লিঙ্গ। বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে মস্তিষ্ক।

তারুণ্যের উদ্যোমে যুবক-যুবতীরা তাকায় তৃতীয় আরেক জোড়া চোখে। যে চোখে সে স্বপ্ন দেখে— রঙ্গিন আরেক দুনিয়ার।

১৩-১৮ এবং ১৮-২৩ এই সময়গুলোকে স্বর্ণযুগ বলা যায়।  জীবনকে সাজানোর সকল উপকরণ এই সময়ের প্রতিটি ভাঁজে ভাঁজে বিদ্যমান। এই বয়সগুলোর 'সঠিক পরিচর্যা' আর 'সাধ্যমতো পরিশ্রম' জীবনকে নিয়ে যায়- সম্ভাবনাময় এক সফল দিনের দিকে। জীবনের এই সুবর্ণ সময়গুলোর সঠিক পরিচর্যা করে, গ্রামের অজপাড়াগাঁয়েও ইতিহাস রচিত হয়েছে।
তারুণ্যের এই বয়সে মস্তিষ্ক হয়ে ওঠে বিক্ষিপ্ত। আবেগ প্রাধান্য পায় বিবেকের উপর। যুবক-যুবতীরা তার বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ক্রমশঃ দুর্বল হয়ে পড়ে। তারুণ্যের উদ্দীপনায় পৃথিবীতে তাকায় তৃতীয় আরেক জোড়া চোখে। ডুব দেয়- যান্ত্রিক আর আধুনিক জীবনের ভার্চুয়াল জগতে। বেলাশেষে, যার ফলাফল শূন্য এবং খেসারত— সময়, স্বাস্থ্য ও অর্থ!
অথচ সম্ভাবনাময় এই সময়গুলোর সঠিক মূল্যায়ন করে প্রভুর সান্নিধ্য, পার্থিব সাফল্য ও প্রকৃত মানুষ্যত্ব অর্জন করা সম্ভব।
একঝলক : মানুষের জীবনে ২০ বছর পর্যন্ত ইচ্ছার রাজত্ব চলে, ৩০ বছর পর্যন্ত চলে বুদ্ধির রাজত্ব আর ৪০ বছর বয়সে আসে বিচার-বিবেচনার রাজত্ব।

“ মানুষের জীবনে বিশ বছর পর্যন্ত ইচ্ছার রাজত্ব চলে, তিরিশ বছর পর্যন্ত চলে বুদ্ধির বাজত্ব এবং চল্লিশ বছর বয়সে বিচার-বিবেচনার রাজত্ব। ”


আমি ব্যর্থ নই!

 


পুষ্পবতী

সে জানে না যে, সে নিজেই একটি ফুল!

করোনার বছর। স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালতসহ সবকিছুই কেমন যেন থমথমে। ব্যস্ত শড়কেও পিনপতন নীরবতা। মাসকট্ প্লাজা, যমযম টাওয়ার, আমেনা বিগ বাজার ও ফাইভ স্টারের মতো নামি-দামি মার্কেটগুলোতে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হচ্ছে। আজ এই গোধূলি বেলায়— ডিয়াবাড়ির লেকপাড়ে কিন্নর-কিন্নরীদের বেশ আড্ডা জমে থাকতো; বেঞ্চগুলো সাঁটানোই আছে, টেবিলগুলোও পাতানো আছে, তবে তা শূন্য। ফুসকার দোকানগুলোতে বড়বড় তালা ঝুলছে। লেকের পানিতে দুই আসনের কাপল রঙ্গিন বোর্ডগুলো, এলোমেলো ভেষে বেড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে, করোনা তাদের পরাস্ত ঘোষণা করে, বিজয়ী বেশে পুরো লেকটা দখল করে নিয়েছে। উত্তর আকাশ থেকে, বিরাটকার দেহ নিয়ে, শাঁইশাঁই করে একটি বিমান উড়ে গেলো এয়ারপোর্টে। লেকের পানিতে স্পষ্টভাবে তার ছায়া ভেষে উঠলো। এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি (চারপাঁচ সন্তানের পিতা হবে) বাদামের ঝুলি গলায় নিয়ে আমার দিকে আসছে। ইচ্ছে না থাকার পরেও লোকটির চেহারার দিকে তাকিয়ে— ২০ টাকার বাদাম কিনলাম। এই থমথমে পরিবেশে কে জানে (?) কেউ ১০ টাকার বাদাম কিনেছে কি না। আমি জিজ্ঞেস করলাম, মামা! আজ কতটাকার বাদাম বিক্রি হলো? লোকটি কপাল কুঁচকিয়ে দীর্ঘশ্বাস মিশিয়ে, ভারী গলায় জবাব দিলো— আপনিসহ দেড়শত টাকার! আমি দ্বিতীয়বার কোনকিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না। বাদাম বিক্রেতা চলে যাওয়ার পর, পিছন থেকে একটি মেয়ে শিশু ছুটে এলো। বড়জোর ক্লাস থ্রি-তে পড়ার উপযোগী হবে। কী ফুটফুটে উজ্জ্বল ফর্সার চেহারা! কাঁধ ছুঁয়েছে এলোমেলো কালো কেশ। টানাটানা ভ্রু। যেন চাঁদের আধখানা! আমি কিছু বলেওঠার আগেই সুদর্শনা বললো, ভাইয়া! খুব তাজাতাজা ফুল এনেছি কিনবেন? আজ একটাও বিক্রি করতে পারি নি। না-ও না ভাইয়া! দু'টো কিনলে একটা ফ্রী দিয়ে দিবো! আমি 'থ' হয়ে মায়াবতীর মায়ামেশা কথাগুলো শুনছিলাম। জিজ্ঞেস করলাম, তুমি যে একটা ফ্রী দিয়ে দিবে, তাতে তোমার লস্ হবে না? পুষ্পবতী জবাব দিলো, লস্ হলেও দিয়ে দিবো। আমার হাতে থাকা বাদামের প্যাকেটটা তাকে দিচ্ছিলাম। সে নিতে রাজি হচ্ছিলো না। ফুল কেনার শর্তে রাজি হলো। আমি ৩৫ টাকা দিয়ে একটি তাজা গোলাপ ও ২৫ টাকা দিয়ে কিছু কাঠগোলাপ কিনলাম। গোলাপটি পূনরায় তার হাতে ফিরিয়ে দিতে— পুষ্পিতা ভ্রূদ্বয় উঁচিয়ে বললো, ভাইয়া! আপনি এটা নিবেন না? ফুলটা তার ঝুলেপড়া চুলগুলো সরিয়ে, কানের ডগায় গুজিয়ে দিলাম। তার মনকাড়া ও টোলপড়া গালের হাসিতে আমার বুকটা ভরে গেলো। ইচ্ছে করছিলো, তার পছন্দমতো খাবার খাওয়াবো। আশপাশের দোকানগুলো বন্ধ থাকায় ১০০ টাকা তার হাতে দিয়ে বললাম, এটা একান্তই তোমার জন্য। কিছু খেয়ে নিও। টুকটুকে লাল গোলাপটা, তার নিকষ কালো চুলের ফাঁকে বেশ লাগছিলো! 

আচ্ছা, তোমার নাম কি? আমার নাম তাসলিমা। স্কুলে যা-ও না? ২ কি'বা ৩ শো মিটার দূরের এক বস্তির দিকে ইশারা করে বললো, ঐখানে আমার বাড়ি। বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে। আমার 'মা' পাগলি। আমি স্কুলে গেলে আমার মা'কে কে খাওয়াবে? 

আহ! কী করুণ ভাষ্য আর কী নিদারুণ প্রশ্ন! আমি নির্বাক হলাম। আমার হতবাক নীরব চোখের দিকে তাকিয়ে, পিচ্চি তাসলিমা হয়তো বুঝতে পেরেছিলো, তার এই প্রশ্নের জবাব আমার জানা নেই; তাই আমার চোখের সামন দিয়ে, ফুলের ঝুড়ি হাতে নিয়ে, আস্তে-আস্তে আড়াল হলো সে...


(বাইশ এক বিশ)

আর্টিকেলটি ভারতের র বি বা স রী য় পত্রিকায় প্রকাশিত

Situation is changeable

  পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল: ধৈর্য্য ধরুন জীবনে পরিস্থিতি কখনো স্থির থাকে না। সময়ের সাথে সাথে, আমাদের চারপাশের ঘটনা, সম্পর্ক, আর্থিক অবস্থা, স্ব...